এই, এই উঠেন না! দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!
-এমন করো না আয়েশা আরেকটু ঘুমাতে
দাও প্লিজ।
-না না এক্ষুনী উঠেন আপনি।নামাজের
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।আরেকটু ঘুমালে
ফজরের নামাজ মিস করে যাবেন। আমি
থাকতে তা হবে না।এখনই উঠেন।
-উফ, একদিন না পড়লে কিছু হবে না
আয়েশা। প্লিজ ঘুমাতে দাও।
কিছুক্ষণ চুপ রইলো আয়েশা। আয়েশার
নীরবতা বুৃঝতে পেরে সুমন তাকিয়ে দেখে
আয়েশা ড্যাবড্যাব দৃষ্টিতে তার দিকে
তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে।সুমন উঠে
বসে,
-কি হলো কাঁদছো কেন?
-আপনি আমাকে একটুও ভালবাসেন না।
এ বলে আরো কান্না জুড়ে দেয় আয়েশা।
সুমন হতবাক হয়ে বললো,
এতে আবার ভাল বাসা না বাসার কি
হলো?
- হবে না আবার? কাল তো আমি ওপাড়ে
হুরহুর করে পুলসিরাত পার হয়ে বেহেস্তে
চলে যাবো। আপনি নামাজ না পড়লে
আপনাকে কি যেতে দিবে? তখন আমি একা
একা কিভাবে থাকবো ওখানে? আর
আপনাকে তো শাস্তি পেতে হবে নামাজ
আদায় না করার কারণে তখন আমি কিভাবে
তা সহ্য করবো? আমাকে ভালবাসলে
আপনিও আমার সাথে যাওয়ার কথা
ভাবতেন, হু।
-উরে পাগলী, এজন্য এভাবে কাঁতদে হয়?
আমি এ পাড়েও তোমার ও পাড়েও তোমার।
তোমার মতো বউ থাকলে কোন স্বামী কে
আল্লাহ্ বেহেস্তে যাওয়া থেকে বাঁধা
দিবেন না। বুৃঝলে?
-উঁহু, বললেই হলো! খোদা তায়ালা
নামাজের জন্য কাউকে ছাড় দিবেন না।
সেখানে আমি আপনার জন্য কোন
সুপারিশও করতে পারবো না। যার যার আমল
তার তার হবে সেদিন। আপনি বুঝেন না
কেন?
বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে করে বলতে
থাকে আয়েশা।
-আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। প্লিজ এতো ভোরে
এভাবে কেঁদো না। আমি এখনই যাচ্ছি ওযু
করতে। দুজনে একসাথে নামাজ পড়বো ঠিক
আছে?
আয়েশা চোখ মুছতে মুছতে মুচকি হেসে বলে
ঠিক আছে। সুমন ওযু করে আসে। স্বামী,
স্ত্রী দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করে।
সুমন উঠে যেতে চাইলে আয়েশা সুমনের
হাত টা টেনে ধরে বলে, আরেকটু বসেন না
প্লিজ!
-আচ্ছা বসলাম।
-হাতটা দিন এবার।
-হাত দিয়ে কি করবে তুমি?
-আহা, দিন না!
-আচ্ছা ব্যস নাও।
আয়েশা সুমনের হাতটা টেনে ধরে সুমনের
হাতের আঙুলে তাসবীহ জিকির করতে
থাকে।সাথে সাথে সুমনকেও বলে আপনিও
জিকির করুন। সুমন মুচকি হেসে আয়েশা
যেমন টা শিখিয়ে দেয় তেমনটাই জিকির
করতে থাকে। জিকির শেষে সুমনের হাতে
একটা চুম্বন এঁকে দিয়ে আয়েশা বলে,
- এবার মোনাজাত করুন। পারলে কাঁদার
চেষ্টা করুন। আমরা নিজেরাই জানি কত
পাপ করে থাকি, মোনাজাতের সময় সেসব
স্বরণ করে খোদা তায়ালার কাছে ক্ষমা
চাইতে হয়। না পাওয়ার ব্যাথাগুলো মনে
করে কাঁদতে হয় খোদা তায়ালার কাছে।
দুশ্চিন্তায় বা অজানা কারণে বুক যে
ভারী হয়ে থাকে কোন সমাধান পেয়ে
উঠিনা।বিচলিত হয়ে থাকি তার জন্য
সমাধানে কাঁদতে হয়। একবার কেঁদে দেখেন
গত কয়েকদিন ধরে যে দুশ্চিন্তায় ছটফট
করছেন, আমাকেও বলছেন না সে চিন্তা
কেটে যাবে।অনেক হালকা মনে হবে
ভিতরটা।
আয়েশার কথাগুলো চুপচাপ শুনতে থাকে
সুমন।একটু চুপ থেকে বলে,
-তুমি করবে না মোনাজাত?
-হুম করবো ইনশাল্লাহ্ কোরআন
তেলাওয়াতের পর।
-ওহ আচ্ছা!
এই বলে আয়েশা সুমন কে মোনাজাতের
কিছু দোয়া শিখিয়ে দিয়ে নিজে কোরআন
তেলাওয়াত করতে থাকে। সুমন
মোনাজাতের জন্য হাত উপরে তুলে। একটুপর
আয়েশা বুঝতে পারে সুমন কাঁদছে। আস্তে
আস্তে কান্নার শব্দ বড় হতে থাকে। আর
আয়েশা ভাবে আহা! না জানি এ মানুষটার
ভেতর কতোটা যন্ত্রনা, কারো কাছে বলতে
না পারার যন্ত্রনা কতোটা খুঁড়েখুঁড়ে খেয়ে
যাচ্ছে মানুষটাকে তা বুৃঝা যাচ্ছে কান্নার
শব্দে। এদিকে সুমনের কান্নার শব্দ ক্রমশ
বেড়ে চলেছে।আয়েশার ভেতরটা হুহু করে
কেঁদে উঠছে।চোখের জল টপটপ পড়ছে।
বারবার ইচ্ছে করছে সুমনের কাঁধে হাত
রেখে শান্তনা দিতে আবার নিজেকে
বলছে, না কাঁদুক মানুষটা আরো কাঁদুক
ভেতরের পাহাড় হালকা করুক।নিজের
সৃষ্টিকর্তার কাছেই তো কাঁদছে আমি চোখ
মুছে দিতে গেলে স্রষ্টার আর সৃষ্টির
আলাপের মাঝে ব্যাঘাত ঘটে যাবে।তাতে
খোদা অসন্তুষ্ট হবেন আমার উপর।
চোখের জল মুছে আয়েশা কুরআন
তেলাওয়াতের দিকে মন দেয়ার চেষ্টা
করে।সুমন মোনাজাত শেষে বিছানায় বসে
পরে। আয়েশার কুরআন তেলাওয়াত শেষ
হওয়ারঅপেক্ষায় থাকে।যখন শেষ করে
আয়েশা উঠে এসে সুমনের পাশে বসে, তখন
সুমন আয়েশার দিকে নীরব দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকে।তাতে আয়েশা বলে,
-কি হলো, কিছু বলবেন?
সুমন দুহাত আয়েশার চিবুকে রেখে কপালে
আলতো চুম্বন এঁকে দিয়ে বলে,
-সত্যি আমার ভিতরটা অনেক হালকা
লাগছে। কদিন ধরে অজানা কারণে
দুশ্চিন্তায় ভেতরটা দগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল
সাথে জেনে না জেনে করা পাপগুলো
খুঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছিল। জানি না সেই পাপের
গুনাহ মাফ হবে কিনা তবে সেসব পাপেরর
ক্ষমা চেয়ে সত্যি অনেক হালকা লাগছে
আয়েশা। কথা দিলাম আজ থেকে আর
কোনদিন নামাজ মিস হবে না ইনশাল্লাহ্।
আয়েশা মুচকি হেসে বললো, তাহলে ও
পারেও আপনি আমার হবেন ইনশাল্লাহ্।
Comments
Post a Comment