“করুণা নয় সত্যিকারের প্রেম”


আজ মীমের বিয়ে । শহরের নামকরা একজন ডাক্তারের সাথে । মীম দেখতে তেমন আহমরি সুন্দরী নয় আবার তেমন ধনী পরিবারের মেয়েও নয় । তাই মীম কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে , এতো বড় ডাক্তার কেন মীমকে বিয়ে করছে ?
.
মীমের আজ যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার নাম হাবিব আদনান । শহরের সবাই এক নামে চেনে বা জানে । কারণ ডাক্তারি হিসাবে হাবিব যে সব বিষয়ে স্পেশালিস্ট । মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালযে পড়ার সময় কত মেয়ে যে হাবিবকে প্রেমের প্রস্তাব দিযেছে তার হিসাব নাই । কিন্তু হাবিব কারো ভালোবাসাই গ্রহন করে নি । সেই হাবিব কিনা আজ মীমের মত এক সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করছে । সত্যিই এক বড় রহস্য !
.
দরজা লাগানোর শব্দে মীম দরজার দিকে তাকায় । দেখে , হাবিব দরজা দিযে মীমের দিকে আসতেছে । খাটের কাছে আসতেই মীম খাট হতে নেমে সালাম করতে যাবে এমন সময় হাবিব মীমের পা ধরে বলে উঠলো মীম আমাকে ক্ষমা করে দাও । মীম অবাক হযে দুইপা পিছনে গিযে বললো , কি করতেছেন ? আপনি আমার স্বামী । আর আপনি আমার কি ক্ষতি করছেন , যে ক্ষমা চাইতে হবে?
.
হাবিব মীমকে নিয়ে বারান্দায় গিযে বসে । তারপর মীমকে জিজ্ঞেস করে ।
-মীম , তোমার কি ১২ ই ফেব্রুয়ারি কথা মনে আছে ।
-হ্যা । থাকবে না কেন ? ওই দিন আমার এক বেয়াকুবের সাথে ধাক্কা লেগে ফলে ফ্লাই-ওভার হতে নিচে পড়ে যাই । কিন্তু এটা জিজ্ঞেস করার কারণ কি ?
-ওই দিন তোমার অপারেশন কে করছিল মনে আছে ?
-থাকবে না কেন ? আপনে করছিলেন ।
-হুম । তুমি কি জানো ? তুমি আর কখনই মা হতে পারবে না ।
-মানে কি ? কেন ? কি বলছেন এ সব ?
-যা বলছি । সত্য বলছি , মীম । তুমি আর মা হতে পারবে না ।
  • কিন্তু কেন ?
-কারণ আমি । আমি সেদিন তোমার অপারেশন করছিলাম । ঝড়বৃষ্টির হচ্ছিল তাই হাসপাতালে তেমন কোনো নার্স ছিল না । তাই বাধ্য হয়ে আমি একাই আপনার অপারেশন করছিলাম । কিন্তু তখন ১২.০০ টা বেজে গিয়েছিল । তাই নিত্য দিনের অভ্যাস মত আমি আমার গার্ল ফ্রেন্ডকে মেসেজ করতে গিয়ে মোবাইল হাত থেকে পড়ে যায় এবং সরাসরি আপনার ফলিপিয়ান টিউবের উপর পড়ে । ফলে আপনার ফলিপিয়ান টিউব ছিঁড়ে যায় । তাই আপনি আর মা হতে পারবেন না (….বলতে বলতে হাবিবের চোখ থেকে দুই তিন ফোটা জ্বল গড়িযে পড়ে….) ।
-তা আপনি সেদিন বলেন নি কেন ?
-আমি সেদিন বলতে পারি নাই ।
-ওহ । সেই জন্য বুঝি করুণা করে আমায় বিয়ে করলেন এতো বড় ডাক্তার হয়েও , তাই না ?
-না । করুণা হবে কেন ? আমার দোষে ঘটেছে । তাই আপনাকে আমিই বিয়ে করলাম । তাছাড়া অন্যের বাবা হওয়ার স্বপ্ন কি ভাবে ভেঙ্গে দেই ?
-তা না হয় ঠিক আছে । কিন্তু আমি মা হবো কি ভাবে ? আমার মা হবার স্বপ্ন , আপনি ভাঙ্গেন নি ?
-সরি………….
-শুনেন । সরি বললেই সব হয় না । আর করুণা করতে হবে না । কাল আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন । আমি অন্যের করুণাতে বেঁচে থাকতে চাই না ।
-করুণা হবে কেন ? মনে করেন এটা আমি ভালোবেসে করেছি ।
-হা হা হা……………
-হাসার কি হল ? আমি হাসার কিছু বলেছি ?
-দাঁড়ান হেসে নেই । আপনি প্রেমিকার সাথে মেসেজ করতেন আর আমাকে বলতেছেন আমায় ভালোবেসে বিয়ে করছেন । এর চেয়ে মজার কোনো কথা হতে পারে মি. ডাঃ হাবিব ?
জানেন,“ আমি সারাজীবন প্রেম করি নি কারণ স্বামীর বিশুদ্ধ ভালোবাসা পেতে চাইছিলাম কিন্তু ভাগ্য খারাপ বলেই হয়ত ভালোবাসার বদলে করুণা পেলাম ”(……….বলেই মীম কান্না করতে লাগল………..)
-মীম , আমায় বলতে দিন । আর এই ভাবে কান্না করবেন না । বাবা-মা শুনলে খারাপ ভাববে ।
-আর কি বলবেন ? বলেন ।
.
.
-“ মীম আমি যাকে মেসেজ করছিলাম সে আমায় ভালোবাসে না । শুধু আমি তাকে ভালোবাসতাম । আর সে কোনো দিন আমায় মেসেজ করে নি । আর আমার কোনো খবর নেয় নি কোনো দিন ”
-তাহলে তাকে ভালোবাসতেন কেন ?
-কারণ অনেক ছোট । তবে এটাকে অনুশোচনা বলা যেতে পারে ।
-অনুশোচনা কেন ? আপনি কি ভুলের অস্তাদ ।
-না । শুনেন আগে । পরে বলেন যা বলার ।
“আমি তখন মেডিকেল প্রথম বর্ষে পড়ি । পড়াশোনার চাপ একটু কম ছিল । তাই অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ফেসবুকে গল্প লিখতে লাগলাম । অল্প দিনে জনপ্রিয় হয়ে যাই । তারপর একদিন একটা আইডি থেকে মেসেজ আসে “ আমি যেন তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট অ্যাকসেপট করি ” । আমার আইডি টা ভালো লাগে তাই অ্যাকসেপট করে নেই । কিন্তু মেয়ের আইডিটাতে উল্টাপাল্টা ইংলিশ লেখা স্টাটাস দেখি কিছুদিন পর । তাই রাগে অনেক বোকা দেই । তারপর মেয়েটাকে বিদ্রুপ করে গল্পি লিখে ফেসবুকে পোস্ট করি । মেযেটা আমার গল্প পড়ে অনেক বড় একটা মেসেজ করে যাতে ইমোশন ছিল সেই সাথে ছিল সরি লেখা । ফলে আমি আমি আমার ভুল বুঝতে পারি যে , একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি । তাই আমি আমার পারছোনাল আইডিটা বাদ দিতে অনন্ত নামে ফেসবুক আইডি খুলে মেয়েটাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই কিন্তু অ্যাকসেপট করে না । তাই আমি প্রত্যেকদিন একটা করে লাভ মেসেজ দেই । তোমার অপারেশনের দিন পর্যন্ত মোট ২২৩০ টি । কিন্তু সে আমাকে একটি মেসেজও দেয় নি তবে দুইটা মেসেজে দিযেছিল । বলেছিল এইসব ফালতু প্রেমে সে বিশ্বাস করে না । আর যদি আমার প্রেম খাঁটি হয় তাহলে আমি তাকে পাব । কিন্তু হয়ত আমর প্রেম খাঁটি ছিল না তাই আমি তাকে পাই নি । কিন্তু তোমাকে আমি কোনো করুণা করছি না । বিশ্বাস রাখতে পারো । এখন থেকে আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসব ”
.
.
“মীম অবাক চোখে তাকায় হাবিবের দিকে তারপরে বলে
-মেয়েটির নাম কি লামিয়া ছিল ?
-….(হাবিবও অবাক চোখে মীমের দিকে তাকায়)….আপনি কি তাকে চিনেন ? চিনলে বলে দিবেন যে , আমার প্রেম সত্যিকারের ছিল না ।
-না । আপনার প্রেম সত্যিকারের ছিল । আর মেযেটিকে আপনি পেয়েছেন ।
-মানে তুমিই সেই লামিয়া ?
-হুম ।
“বলেই মীম দৌড়ে এসে হাবিবকে জড়িযে ধরে কান্না করতে থাকে । হাবিবও কান্না করে দেয় ”
-তাইলে আমি কি এখন করুণা করছি না ?
-না , আমার বুদ্ধ প্রেমিক । তোমার প্রেম কি করুণা হতে পারে ?
-তাহলে আমার প্রেম কি ?
.
“সত্যিকারের প্রেম বুদ্ধ , বলেই মীম হাবিবকে আর শক্ত করে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে নেয় যা কখনই ছিন্ন হওয়ার নয় ।”

Comments